News and Events

শাবিপ্রবিতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস-২০২৫ পালন

Date : 07 Nov 2025

আজ ৭ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখ, শুক্রবার যথাযোগ্য মর্যাদায় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট-এ নানা আয়োজনে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস-২০২৫ পালন করা হয়।


দিবসটি উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উদ্যোগে সকাল ১০টায় একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি অনুষ্ঠিত হয়। ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বে র‌্যালিটি প্রশাসন ভবন-১ এর সামনে থেকে শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে মিনি অডিটোরিয়ামে এসে আলোচনা সভায় মিলিত হয়।


মিনি অডিটোরিয়ামে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী।


বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ সাজেদুল করিম এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ ইসমাইল হোসেন।


প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. এ. এম. সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস আমাদের জাতির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ দিবস। এই দিবসের মূল নায়ক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন স্বাধীনতার মহান ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। বিগত ১৭ বছর এ দিবসটি পালনের সুযোগ দেওয়া হয়নি। নতুন প্রজন্মকে এ দিবসের তাৎপর্য ভুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু ইতিহাস কখনো জোর করে মুছে ফেলা যায় না। আজ সেটিই প্রমাণিত সত্য। 


তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়-এ জিয়া পরিষদ এর কোষাধ্যক্ষ থাকাকালীন আমি তাঁর ক্যান্টনমেন্টের বাসায় যাওয়ার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাঁর পরিবারের স্মৃতিবিজড়িত এই বাসাটি একসময় গুড়িয়ে দেওয়া হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দেশের মানুষকে গভীরভাবে ভালোবাসতেন এবং নিজেও অত্যন্ত সৎ মানুষ ছিলেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, যিনি দেশ ও মানুষের কল্যাণে কাজ করেন তিনি মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেন। এমন মানুষদের ইতিহাস থেকে কখনো মুছে ফেলা যায় না। আমাদের সন্তানদের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। কারণ সঠিক ইতিহাস জানার মাধ্যমেই তারা দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে। 


বিশেষ অতিথির বক্তব্য প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক ড. মোঃ সাজেদুল করিম মহান মুক্তিযুদ্ধ ও ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বরে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের অবদান ও নানা ঘটনাবলী তুলে ধরেন।  


তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে সেই আকাঙ্খার বাস্তবায়ন শুরু হয়েছিল যে আকাঙ্খা নিয়ে মানুষ স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখেছিল। তিনি ‘বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ’ এর ধারণা দেন যা এই ভূখন্ডের মানুষের জন্য একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতীয়তাবাদ। তাঁর রাষ্ট্রদর্শন ছিল ন্যায়-নীতিভিত্তিক, শোষণমুক্ত ও স্বনির্ভর রাষ্ট্র গঠনের দর্শন। আমি বিশ্বাস করি, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রবর্তিত তিনটি মূলনীতি বহুদলীয় গণতন্ত্র, স্বয়ংসম্পূর্ণ জাতীয়তাবাদ এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় দর্শন আমরা যদি ধারণ করি ও বাস্তবায়ন করি, আমাদের দেশ স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ রাষ্ট্র হিসেবে দ্রুতই বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে, ইনশাআল্লাহ।


কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোঃ ইসমাইল হোসেন বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ স্বপ্ন দেখেছিল একটি সুন্দর, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে উঠবে যেখানে মানুষের ন্যায্য অধিকার ও স্বাধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু রক্ষীবাহিনী ও বাকশাল গঠনের মাধ্যমে মানুষের সেই মৌলিক আকাঙ্খাগুলোকে দমন করা হয়। যার ফলে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে দেশের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি কাটিয়ে স্থিতিশীলতা ফিরে আসে। তিনি দেশের অর্থনৈতিক ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করেন। আমরা মনে করি, ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর আমাদের শিক্ষা দেয় কিভাবে শ্রমিক, কৃষক ও সাধারণ জনগণ সবাই স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রশ্নে এক কাতারে দাঁড়িয়েছিল। একইভাবে জুলাই বিপ্লবও জাতির ঐক্যের প্রতীক হিসেবে ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।


আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ মাহবুবুর রশিদ এবং সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক মুহ. মিজানুর রহমান। স্বাগত বক্তব্য রাখেন রেজিস্ট্রার সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির।


আলোচনা সভায় ‘অনুপ্রেরণায় জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস: বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার পাঠ’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আশরাফ সিদ্দিকী এবং নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবুল ফজল মোহাম্মদ জাকারিয়া।


আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ আশরাফ উদ্দিন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ খায়রুল ইসলাম, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মোঃ আতিকুল হক, পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ নজরুল ইসলাম, গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মোঃ গোলাম আলী হায়দার চৌধুরী, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল শাবিপ্রবি শাখার সভাপতি রাহাত জামান এবং সাধারণ সম্পাদক নাঈম সরকার প্রমুখ।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) আ ফ ম মিফতাউল হক। 

আলোচনা সভা শেষে বাদ জুমা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে আয়োজিত দোয়া মাহফিলে মসজিদের পেশ ইমাম মাওলানা মতিউর রহমান দেশ ও জাতির কল্যাণ কামনায় মোনাজাত করেন।


এসব কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।